রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। যেগুলোর বেশিরভাগই করা হয়েছে বহুতল ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে নেই অগ্নি নিরাপত্তা। লিফট ও একটি সিঁড়ি ছাড়া জরুরি বহির্গমনে আর কোনো সিঁড়িও নেই অধিকাংশের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বেইলি রোডের ঘটনায় মানুষের মধ্যে এখন একটি আতঙ্ক কাজ করছে।
আরও পড়ুন: রেস্টুরেন্টে খেতে লাগবে ভ্যাকসিন কার্ড: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ধানমন্ডি-গুলশান-বনানীর বিভিন্ন এলাকায়ও যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এমন বহু রেস্টুরেন্ট। অগ্নি নিরাপত্তা লাইসেন্স ছাড়া বছরের পর বছর চলছে এসব রেস্টুরেন্ট। আবাসিক ভবনগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা ও রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে আসা অনেকেই বলছেন, বেইলি রোডের আগুনের ঘটনার মতো অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক আছে ধানমন্ডি-গুলশান-বনানী এলাকাতেও। আগে থেকে ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট। কিছু ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে রেস্তোরাঁ। এসব ভবনের প্রায় পুরোটাই কাচে ঘেরা। ফলে, বাইরে থেকে ভেতরে আলো-বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে কাচ ভাঙা ছাড়া ভেতরে পানি দেওয়ারও কোনো উপায় নেই।
এসব ভবনে ছোট পরিসরে সিঁড়ি রয়েছে। ওই সিঁড়ি দিয়ে জরুরি বহির্গমনের সুযোগ খুব কম। কারণ সিঁড়িগুলোতে হয় বিভিন্ন মালামাল রাখা, নয়তো রেস্টুরেন্টগুলোর ভেতর থেকে সিঁড়িতে যাওয়ার গেট বন্ধ থাকে। সেক্ষেত্রে রেস্টুরেন্টগুলোতে কখনো আগুনের ঘটনা ঘটলে রেস্টুরেন্টে খেতে আসা মানুষ বুঝতেই পারবে না সিঁড়ি কোনদিকে আছে।
গুলশানে বসবাসকারী ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনার পর গুলশান-বনানী এলাকায় রেস্টুরেন্টেগুলোতে পরিবার নিয়ে যেতে চাইলে আতঙ্ক কাজ করছে। কোন রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি আছে বা নেই আমাদের জানা নেই।’
একই ভাবে বনানীতে বসবাসকারী আরেক ব্যবসায়ী দিদারুল হক সানি ইউএনবিকে বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনার পর আপাতত রেস্টুরেন্টে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ অগ্নি নিরাপত্তা এখন বড় একটি ইস্যু। গুলশান-বানানী এলাকায় রেস্টুরেন্টে নেই ফায়ার সেফটি।এ বিষয়ে রাজউক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সঠিকভাবে তদারকি করলে সব রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি মানতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘ধানমন্ডি-গুলশান-বনানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট। কিছু কিছু ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে রেস্টুরেন্ট। এসব ভবনের প্রায় পুরোটাই কাচে ঘেরা। ফলে, বাইরে থেকে ভেতরে আলো-বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে কাচ ভাঙা ছাড়া ভেতরে পানি দেওয়ারও কোনো উপায় নেই।’
আদিল বলেন, বেইলি রোডের ঘটনার পর মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্ক কাজ করছে। বেইলি রোডের মতো আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনি ব্যবস্হা নিতে হবে। না হলে আবার আরেক জায়গায় আগুনের ঘটনা ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, বেইলি রোডের মতো ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি আছে কি না রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে রেস্টুরেন্টের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩
ড. আদিল বলেন, ‘বহুতল ও বিশেষ ব্যবহারের ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার এলার্ম এগুলো ছিল কি না তা তদারকি করা প্রয়োজন। ভবনের সেফটি অডিট করানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
‘অনেক ভবন নিয়ম অনুযায়ী ২টি সিঁড়ি রাখলেও ফায়ার বহির্গমনের সিঁড়িটা অনেকে গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে জরুরি বহির্গমনের সিঁড়ি অন্য কোনো কাজে বা উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরৎসাহিত করতে হবে।’
অনেকেই ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন করে অ-আবাসিক ক্যাটাগরিতে ফেলে। এই “অ-আবাসিক” নাম ব্যবহার করে আবাসিক ভবন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা ইউএনবিকে বলেছেন, বেইলি রোডের মতো যেন আর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। সেসব রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি নেই সেগুলো আমরা ব্যবস্হা নেব। ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করতে কাজ করছি।
চেয়ারম্যান বলেন, যেসব আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আবাসিক ভবনের নামে অনুমোদন নিয়ে সেখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে, অথচ তাদের বাণিজ্যিক অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন নেয় একভাবে আর বিল্ডিং করে নকশা বহির্ভূতভাবে। আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ব্যবহার করছে অনুমোদনের বাইরে। এসব বিষয়ে যখনই নজরে আসছে তখনই ব্যবস্হা নিচ্ছি। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে জানা যায়, রাজধানীতে রাজউকের আওতায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ২ লাখের। অনুমোদিত ভবনের মধ্যে ৯০ শতাংশ নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এক টাকার রেস্টুরেন্ট!